ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন? আপনি কি প্রস্তুত? জেনে নিন কিছু টিপস
১. বড় কোম্পানিকে টার্গেট করলে, খুচরা-খাচরা গুলাতে আগে ইন্টারভিউ দিয়ে
প্রাকটিস করে নিবেন। আর খুচরাগুলাতে প্রাকটিস করার আগেই বড়গুলাতে ইন্টারভিউ
কল পাইলে, কোন টিচার, ফ্রেন্ড বা আপনার আম্মুকে, টেবিলের এক পাশে বসিয়ে,
একটা প্রশ্নের লিস্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে, একটার পর একটা জিগ্যেস করতে বলবেন।
উত্তর দিতে গেলে বুঝতে পারবেন। আপনি যেগুলার উত্তর ১০০% জানেন, সেগুলাই
বলতে গেলে, ওয়ার্ড খুঁজে পান না। আমতা আমতা করতে করতে সোজা জিনিসটা তালগোল
পাকিয়ে ফেলেন। তাই, উত্তর জানার চাইতে, উত্তর বলতে পারার কোয়ালিটি বেশি
ইম্পরট্যান্ট। সো, উত্তর লিখে লিখে, বলার প্রাকটিস করার পর আবার আপনার
আম্মুকে বা ফ্রেন্ডকে বলবেন মক ইন্টারভিউ নিতে।
এক মিনিট না তিন মিনিট ::
২. আপনি যখন উত্তর রেডি করবেন। তখন উত্তরগুলার দুইটা ভার্সন করবেন। প্রথমটা হচ্ছে, এক মিনিটের উত্তর। ধর, মার, কাট টাইপের। একদম টু দ্যা পয়েন্টে। কারণ কিছু লোক, জাস্ট টু দ্যা পয়েন্টে উত্তর শুনতে চায়। আপনি গরুর রচনা বলতে শুরু করলে, তারা বোরর্ড হয়ে যায়, ইন্টারেস্ট ধরে রাখতে পারে না, যদিও মাথা নাড়ায়, ভিত্রে ভিত্রে কিন্তু গালি দিতে থাকে, “এই গাধায় এতো প্যাঁচায় কেন!!”। আর আরেকটা ভার্সন থাকবে, তিন মিনিটের উত্তর। আপনার আম্মুকে শিখায় দিবেন, একটা উত্তর শেষ হইলে, আরেকটু ডিটেল জানতে চাইতে।
৩. আসল ইন্টারভিউ এর সময় এক মিনিটের না তিন মিনিটের উত্তর দিবেন। সেটা বুঝার দুইটা টেকনিক আছে। প্রথমে এক মিনিটের উত্তর দিয়ে বলবেন, If you want, I can tell more about it. তখন সে ইন্টারেস্টেড হইলে আপনাকে ডিটেল বলতে বলবে আর না হইলে বলবে না। অথবা তার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে বুঝতে হবে সে আপনার উত্তরে স্যাটিসফাইড কিনা। নাকি আরো ডিটেল জানতে চায়। আর সবচেয়ে খারাপ হয়, আপনি বক বক করে যাচ্ছেন, ওর অবস্থার দিকে খেয়াল করতেছেন না। শেষমেশ ও আপনাকে থামিয়ে অন্য প্রশ্ন করা শুরু করছে।
জাস্ট রিলাক্স ::
৪. ওদের কোন ড্রেস কোড আছে কিনা, আগে থেকে জেনে নিবেন। না থাকলেও, ফর্মাল ড্রেস পরে যাওয়া ভালো। পকেটে মোবাইল, চাবি, পয়সা, কোন কিচ্ছু রাখা যাবে না। শুধু একটা কলম রাখবেন। মোবাইল ব্যাগে সাইলেন্ট করে রাখবেন। এমনকি মানিব্যাগও ব্যাগের মধ্যে রাখবেন। আর ব্যাগের মধ্যে এক্সট্রা কলম, পেন্সিল, কয়েক কপি বায়োডাটা, কাজের স্যাম্পল রাখবেন। যদি লাগে বের করে দেখাবেন।
৫. অবশ্যই নিদৃষ্ট সময়ের ১৫ মিনিট আগে চলে যাবেন। পারলে আগের দিন ইন্টারভিউ এবং গাড়ি পার্কিং করার জায়গা দেখে আসবেন। যাতে ইন্টারভিউ এর আগে খুঁজে পেতে সমস্যা বা টাইম লস না হয়। বেশি আগে পৌঁছে গেলে, আশেপাশের কোন রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করে, ১৫-২০ মিনিট আগে জায়গা মতো পৌঁছে যাবেন। বাসা থেকে বের হবার আগে অবশ্যই ওই কোম্পানির রেসেপশনের ফোন নাম্বার মোবাইলে সেইভ করে নিবেন। কোন কারণে দেরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, আগে থেকে ফোন করে জানায় দিবেন। এবং কতক্ষণ দেরী হতে পারে সেটা হালকা একটু বেশি করে বলবেন, যাতে দুইবার বলা না লাগে।
৬. ইন্টারভিউ এর পনের মিনিট আগ থেকে কিচ্ছু পড়বেন না বা রিভাইজ দিতে যাবেন না। এই সময়টাতে রিলাক্স করেন বা ভালো লাগে এমন কিছু মোবাইলে দেখেন। মোটা বিশাল বই থেকে ১৫ মিনিটে পড়ে উল্টায় ফেলতে পারবেন না। উল্টানোর ইচ্ছা থাকলে সেটা আগে করে আসবেন। শেষ ১৫ মিনিট বা এক ঘন্টা এর জন্য ফালায় রাখবেন না।
৭. আপনার ইন্টারভিউতে কে কে থাকবে, জানতে পারলে, তাদের পজিশন, জব রেসপনসিবিলিটি, এক্সপেরিয়েন্স, ব্লগ বা ওয়েবসাইট (থাকলে), এমনকি linkedIn এ তাদের প্রোফাইল ঘেঁটে, ভালো করে জেনে যাবেন। ওই কোম্পানি এবং যে ডিপার্টমেন্টের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, সেই ডিপার্টমেন্টের কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা নিবেন। না জানলে, আপনি ওই কোম্পানির কোন সিনিয়র বা সরাসরি রিসিপশনে ফোন দিতে পারেন।
Problem, Action, Result, Future ::
৮. আপনার রেজুমিতে আগের যত জব বা প্রজেক্ট বা কোর্সের নাম আছে, প্রত্যেকটা সম্পর্কে চারটা জিনিস আগে থেকে ঠিক করে লিখে, মুখস্থ করে যাবেন। সেগুলা হচ্ছে, আপনি কি Problem সলভ করছেন, আপনি কি কি Action নিছেন বা কাজ করছেন, কি Result আসছে বা কি শিখছেন এবং Future আবার করা লাগলে কোন কোন জিনিস অন্যভাবে করবেন। সংক্ষেপে মনে রাখার জন্য, PARF. আর বলার সময় সিরিয়াল ধরে বলে দিবেন দেড় থেকে দুই মিনিটের মধ্যে।
৯. আপনি যে পজিশনের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, সেটার জব ডেসক্রিপশনে যত সফটওয়্যার, স্কিল বা কি-ওয়ার্ড আছে সেগুলা না জানলেও, গুগল করে, উইকিপিডিয়া, ইউটিউবে ভিডিও দেখে বা কোন সিনিয়র/টিচারকে জিগ্যেস করে, মোটামুটি একটা আইডিয়া নিয়ে যাবেন। আর কাউরে না পাইলে, ওই কোম্পানিকেই সরাসরি ফোন দিতে পারেন। ওদেরকে ফোন করলে, ওরা বুঝে ফেলবে আপনি আসলেই জব এর জন্য সিরিয়াস। আর ইন্টারভিউতে ওগুলা নিয়ে প্রশ্ন করে বসলে, আপনি হাবলাকান্তের মতো বসে না থেকে কিছু একটা বলতে পারবেন।
১০. আপনার রেজুমিতে যা যা লিখা আছে, সেগুলি পাঁচ-দশ বছর পুরান প্রজেক্ট, সফটওয়্যার যাই থাকুক না আগের হোক না কেনো, সবগুলা সম্পর্কে PARF (Problem, Action, Result, Future) করে যাবেন। এমন যাতে না হয়, অনেক আগে করছিলাম, এখন ভুলে গেছি। তাইলে কিন্তু চটকনা খাবেন।
বডি ল্যাঙ্গুয়েজ::
১১. ইন্টারভিউ এর সময়, যে ইন্টারভিউ নিচ্ছে তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝা খুবই ইম্পরট্যান্ট। তারসাথে ইন্টারাকশন ইফেক্টিভলি হচ্ছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। সে কি আপনার উত্তর বুঝতে পারতেছে নাকি এইদিক ওই দিক তাকাচ্ছে। eye কন্ট্রাক্ট রাখবেন। আবার একটানা তাকায় থাকবেন না। নরমাল ভাবে চেয়ারে বসেন। ঝুঁকে বা ঠেস দিয়ে বসবেন না। তার কথা আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেছেন সেটা বুঝানোর জন্য মাঝেমধ্যে মাথা ঝাঁকাবেন, হালকা একটু হাসিও মাঝেমধ্যে দিবেন। আর হাত পকেটের মধ্যে বা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখবেন না। চেয়ারের হাতলে বা টেবিলের উপরে ছেড়ে দিয়ে রাখবেন। হাতে কলম থাকলে নাড়াবেন না।
১২. যদি হোয়াইট বোর্ড বা পেপার পেন্সিল থাকে টেবিলের উপর। এবং আপনার কোন জিনিস ড্র করে এক্সপ্লেইন করতে সুবিধা হবে মনে হয়, তাইলে বোর্ড বা কাগজ ব্যবহার করতে পারবেন কিনা জিগ্যেস করবেন।
হ্যান্ডেল টাফ কোয়েশ্চেন ::
১৩. অনেক সময় ইচ্ছে করেই, আপনাকে প্রশ্ন করার সময় সব তথ্য দিবে না। দেখতে চাইবে, আপনি পুরা সিচুয়েশন সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারণা নিয়ে, উত্তর দেয়া শুরু করেন। নাকি, না বুঝেই হাফ-ঝাপ মেরে কাজ শুরু করেন আর মাঝপথে গিয়ে গুবলেট পাকিয়ে ফেলেন। তাই উত্তর দেয়ার আগে, সম্পূরক প্রশ্ন করে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করতে হবে। ধরেন, আপনাকে জিগ্যেস করলো, একটা বাড়িতে কয়টা শোবার ঘর থাকা উচিত। আপনি ফুস করে বলে দিতে পারেন ৪ টা (জামাই-বৌ, ছেলে, মেয়ে আর বাবা-মা)। কিন্তু তারপর সে যদি বল্ল, আমি আসলে গেস্ট হাউজ বা সামারে অবসর কাটানোর রিসোর্ট বা অন্য কিছু বানাবো। তাইলে আপনার উত্তর কিন্তু ভুল হয়ে গেলো। তাই, আন্দাজে উত্তর দেয়ার আগে, সম্পূরক প্রশ্ন করে, ক্লিয়ার ধারণা নিলে, উত্তর সঠিক হবার চান্স বেশি থাকে। এবং সঠিক প্রশ্ন আগে জিগ্যেস করতে পারাটা অনেক বড় একটা গুন, যেটা অনেক কোম্পানি দেখতে চায়।
১৪. প্রশ্নকর্তাকে ইন্টারাপ্ট করা যাবে না। প্রশ্ন পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে তাকে থামাবেন না। তার ভুল ধরতে যাবেন না। দুই একজন অতীব পণ্ডিত ইচ্ছে করে ভুল বা ট্রিক-মার্কা কোন প্রশ্ন করে, আপনার রিঅ্যাকশন দেখতে চাইবে । আপনি যদি ২০০% শিউর হোন যে, সে ভুল করতেছে। তারপরেও বলবেন, আমার মনে হচ্ছে, আমি ঐখানে অন্যরকম কিছু একটা দেখছি। বা আমার মনে হচ্ছে এই রকম কিছু একটা। তবে, আপনি এখন যেটা বলতেছেন, সেটা ইন্টারেস্টিং, আমি চেক করে দেখবো।
১৫. অনেক সময় এমন একটা প্রশ্ন করে বসে। যেটা আপনার মনে আসতে আসতেও কেনো জানি আসতেছে না। আরেকটু সময় দরকার চিন্তা করার। তখন কেউ কেউ, Let me think বলে ৩০ সেকেন্ড বা সর্বোচ্চ ১ মিনিট সময় নেয়। কোন অবস্থাতেই তিন-চার মিনিট সময় নেয়া যাবে না। আরেকটা ট্রিকস হচ্ছে, ইন্টারভিউ যে নিতেছে তাকে বলা, Interesting, can you explain little more, এইটা বল্লে, সে যখন এক্সপ্লেইন করবে, চামে আপনি একটু চিন্তা করার এক্সট্রা টাইম পেয়ে গেলেন।
১৬. এমন একটা প্রশ্ন করে বসলো, যেটা আপনি জিন্দেগীতে শুনেন নাই। তখন হুট করে, পারিনা বা কনফিডেন্টলি ভুল উত্তর দেয়ার চাইতে। নাম শুনে কিছু একটা ধারণা করতে পারেন। এবং বলে দিবেন, আমি পুরাপুরি শিউর না, তবে আমার মনে হয়, এইরকম কিছু একটা পারে। বা অমুকরে জায়গায় জিগ্যেস করা যেতে পারে। এতে সুবিধা হচ্ছে, আপনি ভুল বল্লেও সেটা আপনার এগিনিস্টে যাবে না। বরং ট্রাই করছেন এবং কোথায় গেলে সল্যুশন পাওয়া যেতে পারে, সেই চেষ্টা করছেন। ওরা জানে, দুনিয়ার সবাই সবকিছু আগে থেকে জানবে না। হাত পা না ঘুটিয়ে একজন চেস্টা করলে সেটা পজিটিভলি নিবে।
Behavioral Questions::
১৭. টেকনিক্যাল প্রশ্নের পাশাপাশি অনেকগুলা কমন প্রশ্ন জিগ্যেস করে, যেগুলার উত্তর আগে থেকে প্রাকটিস করে নিতে হবে। যেমন, Tell me about yourself (উত্তর প্রথম কমেন্টে), What is your strength, What is your weakness, How do you handle conflict with team member, Tell me a situation when you failed to meet deadline, এরকম আরো অনেকগুলা।
কোন প্রশ্ন আছে::
১৮. অনেকেই ইন্টারভিউ শুরু করার আগে জিগ্যেস করে, তোমার কোন প্রশ্ন আছে কিনা। আমি সাজেস্ট করি, বলবেন, I do have some questions, I would like to save them for later. আর কি কি প্রশ্ন করবেন সেটা অবশ্যই আগে থেকে সেট করে নিয়ে যাবেন। যদি একাধিক জনের সাথে ইন্টারভিউ থাকে, তবে প্রত্যেককে কমপক্ষে দুইটা করে প্রশ্ন জিগ্যেস করবেন। এবং একই প্রশ্ন একাধিক জনরে জিগ্যেস না করার চেষ্টা করবেন। তবে আমি যেসব প্রশ্ন করার চেষ্টা করি, তারমধ্যে, What makes you excited to come here every day? বা Other than individual efforts how team and company environment helps you to learn and grow? ইত্যাদি। আর টেকনিক্যাল প্রশ্নও করতে পারেন।
১৯. একটা কোম্পানি দেখতে চায় ওদের এই পজিশনের জন্য যে যে স্কিল বা এক্সপেরিয়েন্স লাগবে সেটা আপনার আছে কিনা। বা না থাকলে আপনি দ্রুত শিখে নিতে পারেন কিনা। আপনি ভালো টিম মেম্বার কিনা। স্ট্রেস হ্যান্ডেল করতে পারেন কিনা। নিজে নিজে রাইট ডিসিশান নিতে পারেন কিনা। আপনার এক্সট্রা কোন স্কিল বা ট্যালেন্ট আছে যেটা ওদের টিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ, আপনি কলিগ হিসেবে ওদের সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন এবং সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারবেন সেটার জন্য আপনার উপর নির্ভর করা যায়। এই জিনিসগুলা প্রুভ করতে না পারলে ওরা আপনাকে নিবে না। বা নিলেও দুই দিন পর ছাটাই করে দিবেন।
২০. আর ইন্টারভিউ শেষ হইলে, ওদেরকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে গুছিয়ে একটা ইমেইল দিবেন। আর উপরের পয়েন্টগুলার কোন একটা কাজে লাগলে, আমারে একটা মিষ্টি খাওয়াইয়েন। প্লিজ।
(টেক্সটাইলের ক্যানভাস)
এক মিনিট না তিন মিনিট ::
২. আপনি যখন উত্তর রেডি করবেন। তখন উত্তরগুলার দুইটা ভার্সন করবেন। প্রথমটা হচ্ছে, এক মিনিটের উত্তর। ধর, মার, কাট টাইপের। একদম টু দ্যা পয়েন্টে। কারণ কিছু লোক, জাস্ট টু দ্যা পয়েন্টে উত্তর শুনতে চায়। আপনি গরুর রচনা বলতে শুরু করলে, তারা বোরর্ড হয়ে যায়, ইন্টারেস্ট ধরে রাখতে পারে না, যদিও মাথা নাড়ায়, ভিত্রে ভিত্রে কিন্তু গালি দিতে থাকে, “এই গাধায় এতো প্যাঁচায় কেন!!”। আর আরেকটা ভার্সন থাকবে, তিন মিনিটের উত্তর। আপনার আম্মুকে শিখায় দিবেন, একটা উত্তর শেষ হইলে, আরেকটু ডিটেল জানতে চাইতে।
৩. আসল ইন্টারভিউ এর সময় এক মিনিটের না তিন মিনিটের উত্তর দিবেন। সেটা বুঝার দুইটা টেকনিক আছে। প্রথমে এক মিনিটের উত্তর দিয়ে বলবেন, If you want, I can tell more about it. তখন সে ইন্টারেস্টেড হইলে আপনাকে ডিটেল বলতে বলবে আর না হইলে বলবে না। অথবা তার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে বুঝতে হবে সে আপনার উত্তরে স্যাটিসফাইড কিনা। নাকি আরো ডিটেল জানতে চায়। আর সবচেয়ে খারাপ হয়, আপনি বক বক করে যাচ্ছেন, ওর অবস্থার দিকে খেয়াল করতেছেন না। শেষমেশ ও আপনাকে থামিয়ে অন্য প্রশ্ন করা শুরু করছে।
জাস্ট রিলাক্স ::
৪. ওদের কোন ড্রেস কোড আছে কিনা, আগে থেকে জেনে নিবেন। না থাকলেও, ফর্মাল ড্রেস পরে যাওয়া ভালো। পকেটে মোবাইল, চাবি, পয়সা, কোন কিচ্ছু রাখা যাবে না। শুধু একটা কলম রাখবেন। মোবাইল ব্যাগে সাইলেন্ট করে রাখবেন। এমনকি মানিব্যাগও ব্যাগের মধ্যে রাখবেন। আর ব্যাগের মধ্যে এক্সট্রা কলম, পেন্সিল, কয়েক কপি বায়োডাটা, কাজের স্যাম্পল রাখবেন। যদি লাগে বের করে দেখাবেন।
৫. অবশ্যই নিদৃষ্ট সময়ের ১৫ মিনিট আগে চলে যাবেন। পারলে আগের দিন ইন্টারভিউ এবং গাড়ি পার্কিং করার জায়গা দেখে আসবেন। যাতে ইন্টারভিউ এর আগে খুঁজে পেতে সমস্যা বা টাইম লস না হয়। বেশি আগে পৌঁছে গেলে, আশেপাশের কোন রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করে, ১৫-২০ মিনিট আগে জায়গা মতো পৌঁছে যাবেন। বাসা থেকে বের হবার আগে অবশ্যই ওই কোম্পানির রেসেপশনের ফোন নাম্বার মোবাইলে সেইভ করে নিবেন। কোন কারণে দেরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, আগে থেকে ফোন করে জানায় দিবেন। এবং কতক্ষণ দেরী হতে পারে সেটা হালকা একটু বেশি করে বলবেন, যাতে দুইবার বলা না লাগে।
৬. ইন্টারভিউ এর পনের মিনিট আগ থেকে কিচ্ছু পড়বেন না বা রিভাইজ দিতে যাবেন না। এই সময়টাতে রিলাক্স করেন বা ভালো লাগে এমন কিছু মোবাইলে দেখেন। মোটা বিশাল বই থেকে ১৫ মিনিটে পড়ে উল্টায় ফেলতে পারবেন না। উল্টানোর ইচ্ছা থাকলে সেটা আগে করে আসবেন। শেষ ১৫ মিনিট বা এক ঘন্টা এর জন্য ফালায় রাখবেন না।
টেক্সটাইল জবের আগে নিজেকে তৈরী করবেন যেভাবে
৭. আপনার ইন্টারভিউতে কে কে থাকবে, জানতে পারলে, তাদের পজিশন, জব রেসপনসিবিলিটি, এক্সপেরিয়েন্স, ব্লগ বা ওয়েবসাইট (থাকলে), এমনকি linkedIn এ তাদের প্রোফাইল ঘেঁটে, ভালো করে জেনে যাবেন। ওই কোম্পানি এবং যে ডিপার্টমেন্টের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, সেই ডিপার্টমেন্টের কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা নিবেন। না জানলে, আপনি ওই কোম্পানির কোন সিনিয়র বা সরাসরি রিসিপশনে ফোন দিতে পারেন।
Problem, Action, Result, Future ::
৮. আপনার রেজুমিতে আগের যত জব বা প্রজেক্ট বা কোর্সের নাম আছে, প্রত্যেকটা সম্পর্কে চারটা জিনিস আগে থেকে ঠিক করে লিখে, মুখস্থ করে যাবেন। সেগুলা হচ্ছে, আপনি কি Problem সলভ করছেন, আপনি কি কি Action নিছেন বা কাজ করছেন, কি Result আসছে বা কি শিখছেন এবং Future আবার করা লাগলে কোন কোন জিনিস অন্যভাবে করবেন। সংক্ষেপে মনে রাখার জন্য, PARF. আর বলার সময় সিরিয়াল ধরে বলে দিবেন দেড় থেকে দুই মিনিটের মধ্যে।
৯. আপনি যে পজিশনের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, সেটার জব ডেসক্রিপশনে যত সফটওয়্যার, স্কিল বা কি-ওয়ার্ড আছে সেগুলা না জানলেও, গুগল করে, উইকিপিডিয়া, ইউটিউবে ভিডিও দেখে বা কোন সিনিয়র/টিচারকে জিগ্যেস করে, মোটামুটি একটা আইডিয়া নিয়ে যাবেন। আর কাউরে না পাইলে, ওই কোম্পানিকেই সরাসরি ফোন দিতে পারেন। ওদেরকে ফোন করলে, ওরা বুঝে ফেলবে আপনি আসলেই জব এর জন্য সিরিয়াস। আর ইন্টারভিউতে ওগুলা নিয়ে প্রশ্ন করে বসলে, আপনি হাবলাকান্তের মতো বসে না থেকে কিছু একটা বলতে পারবেন।
১০. আপনার রেজুমিতে যা যা লিখা আছে, সেগুলি পাঁচ-দশ বছর পুরান প্রজেক্ট, সফটওয়্যার যাই থাকুক না আগের হোক না কেনো, সবগুলা সম্পর্কে PARF (Problem, Action, Result, Future) করে যাবেন। এমন যাতে না হয়, অনেক আগে করছিলাম, এখন ভুলে গেছি। তাইলে কিন্তু চটকনা খাবেন।
বডি ল্যাঙ্গুয়েজ::
১১. ইন্টারভিউ এর সময়, যে ইন্টারভিউ নিচ্ছে তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝা খুবই ইম্পরট্যান্ট। তারসাথে ইন্টারাকশন ইফেক্টিভলি হচ্ছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। সে কি আপনার উত্তর বুঝতে পারতেছে নাকি এইদিক ওই দিক তাকাচ্ছে। eye কন্ট্রাক্ট রাখবেন। আবার একটানা তাকায় থাকবেন না। নরমাল ভাবে চেয়ারে বসেন। ঝুঁকে বা ঠেস দিয়ে বসবেন না। তার কথা আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেছেন সেটা বুঝানোর জন্য মাঝেমধ্যে মাথা ঝাঁকাবেন, হালকা একটু হাসিও মাঝেমধ্যে দিবেন। আর হাত পকেটের মধ্যে বা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখবেন না। চেয়ারের হাতলে বা টেবিলের উপরে ছেড়ে দিয়ে রাখবেন। হাতে কলম থাকলে নাড়াবেন না।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দের ইন্টার্ন নিয়ে কিছু কথা | Textile Internship guideline
১২. যদি হোয়াইট বোর্ড বা পেপার পেন্সিল থাকে টেবিলের উপর। এবং আপনার কোন জিনিস ড্র করে এক্সপ্লেইন করতে সুবিধা হবে মনে হয়, তাইলে বোর্ড বা কাগজ ব্যবহার করতে পারবেন কিনা জিগ্যেস করবেন।
হ্যান্ডেল টাফ কোয়েশ্চেন ::
১৩. অনেক সময় ইচ্ছে করেই, আপনাকে প্রশ্ন করার সময় সব তথ্য দিবে না। দেখতে চাইবে, আপনি পুরা সিচুয়েশন সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারণা নিয়ে, উত্তর দেয়া শুরু করেন। নাকি, না বুঝেই হাফ-ঝাপ মেরে কাজ শুরু করেন আর মাঝপথে গিয়ে গুবলেট পাকিয়ে ফেলেন। তাই উত্তর দেয়ার আগে, সম্পূরক প্রশ্ন করে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করতে হবে। ধরেন, আপনাকে জিগ্যেস করলো, একটা বাড়িতে কয়টা শোবার ঘর থাকা উচিত। আপনি ফুস করে বলে দিতে পারেন ৪ টা (জামাই-বৌ, ছেলে, মেয়ে আর বাবা-মা)। কিন্তু তারপর সে যদি বল্ল, আমি আসলে গেস্ট হাউজ বা সামারে অবসর কাটানোর রিসোর্ট বা অন্য কিছু বানাবো। তাইলে আপনার উত্তর কিন্তু ভুল হয়ে গেলো। তাই, আন্দাজে উত্তর দেয়ার আগে, সম্পূরক প্রশ্ন করে, ক্লিয়ার ধারণা নিলে, উত্তর সঠিক হবার চান্স বেশি থাকে। এবং সঠিক প্রশ্ন আগে জিগ্যেস করতে পারাটা অনেক বড় একটা গুন, যেটা অনেক কোম্পানি দেখতে চায়।
১৪. প্রশ্নকর্তাকে ইন্টারাপ্ট করা যাবে না। প্রশ্ন পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে তাকে থামাবেন না। তার ভুল ধরতে যাবেন না। দুই একজন অতীব পণ্ডিত ইচ্ছে করে ভুল বা ট্রিক-মার্কা কোন প্রশ্ন করে, আপনার রিঅ্যাকশন দেখতে চাইবে । আপনি যদি ২০০% শিউর হোন যে, সে ভুল করতেছে। তারপরেও বলবেন, আমার মনে হচ্ছে, আমি ঐখানে অন্যরকম কিছু একটা দেখছি। বা আমার মনে হচ্ছে এই রকম কিছু একটা। তবে, আপনি এখন যেটা বলতেছেন, সেটা ইন্টারেস্টিং, আমি চেক করে দেখবো।
১৫. অনেক সময় এমন একটা প্রশ্ন করে বসে। যেটা আপনার মনে আসতে আসতেও কেনো জানি আসতেছে না। আরেকটু সময় দরকার চিন্তা করার। তখন কেউ কেউ, Let me think বলে ৩০ সেকেন্ড বা সর্বোচ্চ ১ মিনিট সময় নেয়। কোন অবস্থাতেই তিন-চার মিনিট সময় নেয়া যাবে না। আরেকটা ট্রিকস হচ্ছে, ইন্টারভিউ যে নিতেছে তাকে বলা, Interesting, can you explain little more, এইটা বল্লে, সে যখন এক্সপ্লেইন করবে, চামে আপনি একটু চিন্তা করার এক্সট্রা টাইম পেয়ে গেলেন।
১৬. এমন একটা প্রশ্ন করে বসলো, যেটা আপনি জিন্দেগীতে শুনেন নাই। তখন হুট করে, পারিনা বা কনফিডেন্টলি ভুল উত্তর দেয়ার চাইতে। নাম শুনে কিছু একটা ধারণা করতে পারেন। এবং বলে দিবেন, আমি পুরাপুরি শিউর না, তবে আমার মনে হয়, এইরকম কিছু একটা পারে। বা অমুকরে জায়গায় জিগ্যেস করা যেতে পারে। এতে সুবিধা হচ্ছে, আপনি ভুল বল্লেও সেটা আপনার এগিনিস্টে যাবে না। বরং ট্রাই করছেন এবং কোথায় গেলে সল্যুশন পাওয়া যেতে পারে, সেই চেষ্টা করছেন। ওরা জানে, দুনিয়ার সবাই সবকিছু আগে থেকে জানবে না। হাত পা না ঘুটিয়ে একজন চেস্টা করলে সেটা পজিটিভলি নিবে।
Behavioral Questions::
১৭. টেকনিক্যাল প্রশ্নের পাশাপাশি অনেকগুলা কমন প্রশ্ন জিগ্যেস করে, যেগুলার উত্তর আগে থেকে প্রাকটিস করে নিতে হবে। যেমন, Tell me about yourself (উত্তর প্রথম কমেন্টে), What is your strength, What is your weakness, How do you handle conflict with team member, Tell me a situation when you failed to meet deadline, এরকম আরো অনেকগুলা।
কোন প্রশ্ন আছে::
১৮. অনেকেই ইন্টারভিউ শুরু করার আগে জিগ্যেস করে, তোমার কোন প্রশ্ন আছে কিনা। আমি সাজেস্ট করি, বলবেন, I do have some questions, I would like to save them for later. আর কি কি প্রশ্ন করবেন সেটা অবশ্যই আগে থেকে সেট করে নিয়ে যাবেন। যদি একাধিক জনের সাথে ইন্টারভিউ থাকে, তবে প্রত্যেককে কমপক্ষে দুইটা করে প্রশ্ন জিগ্যেস করবেন। এবং একই প্রশ্ন একাধিক জনরে জিগ্যেস না করার চেষ্টা করবেন। তবে আমি যেসব প্রশ্ন করার চেষ্টা করি, তারমধ্যে, What makes you excited to come here every day? বা Other than individual efforts how team and company environment helps you to learn and grow? ইত্যাদি। আর টেকনিক্যাল প্রশ্নও করতে পারেন।
টেক্সটাইল জবের আগে যে বিষয় গুলি জেনে রাখা উচিৎ | টেক্সটাইল ক্যারিয়ার প্লানিং
১৯. একটা কোম্পানি দেখতে চায় ওদের এই পজিশনের জন্য যে যে স্কিল বা এক্সপেরিয়েন্স লাগবে সেটা আপনার আছে কিনা। বা না থাকলে আপনি দ্রুত শিখে নিতে পারেন কিনা। আপনি ভালো টিম মেম্বার কিনা। স্ট্রেস হ্যান্ডেল করতে পারেন কিনা। নিজে নিজে রাইট ডিসিশান নিতে পারেন কিনা। আপনার এক্সট্রা কোন স্কিল বা ট্যালেন্ট আছে যেটা ওদের টিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ, আপনি কলিগ হিসেবে ওদের সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন এবং সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারবেন সেটার জন্য আপনার উপর নির্ভর করা যায়। এই জিনিসগুলা প্রুভ করতে না পারলে ওরা আপনাকে নিবে না। বা নিলেও দুই দিন পর ছাটাই করে দিবেন।
২০. আর ইন্টারভিউ শেষ হইলে, ওদেরকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে গুছিয়ে একটা ইমেইল দিবেন। আর উপরের পয়েন্টগুলার কোন একটা কাজে লাগলে, আমারে একটা মিষ্টি খাওয়াইয়েন। প্লিজ।
(টেক্সটাইলের ক্যানভাস)
Related Tag:
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং করার পর সরকারি চাকরি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যৎ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ কি টেক্সটাইল বলতে কি বুঝায় টেক্সটাইল এর কাজ কি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রিভিউ
আরও পড়ুনঃ
➤ নিজেকে তৈরী করবেন যেভাবে
➤ ইন্টার্নিতে কিছুটা হলেও শেখা দরকার
➤ টেক্সটাইল এ মেজর সাবজেক্ট নিয়ে বিভ্রান্তি
➤ মসলিন শিল্পের ইতিহাস
➤ বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন বিভাগ সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
➤ টেক্সটাইলে জব এগ্রিমেন্ট করবো কি না
➤ টেক্সটাইল উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়
➤ মেয়েদের জন্য পেশা হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
thanks for your advice
ReplyDeleteWelcome
DeleteThanks for your advise
ReplyDelete