বিভিন্ন প্রকার ফাইবারের সাথে পরিচিতি

বিভিন্ন প্রকার ফাইবারের সাথে পরিচিতি

(১)কটন: গুরত্বের শীর্ষে থাকা এই ফাইবারের পোশাক গরমকালের পোশাক হিসেবে বেশ সমাদৃত। মনুষ্য ব্যাবহারিক পোশাকাদিতে ৫৬% উৎপাদিত কটন ব্যাবহার করা হয়।কটনে তৈরী পোশাক কুঁচকে যায় বিধায় বারবার আয়রন করার প্রয়োজন পড়ে।পোকামাকড় ও আক্রমণ করতে পারে।চীন, ইউ.এস.এ আর ইন্ডিয়াতেই চাহিদার বড় অংশ উৎপাদিত হয়।বাংলাদেশে, কুষ্টিয়া,যশোর আর উত্তরাঞ্চলে যেটুকু কটন উৎপাদিত হয় তা দেশীয় চাহিদারও কোনো উল্লেখযোগ্য অংশীদারিত্ব পাই না।


বিভিন্ন প্রকার ফাইবারের সাথে পরিচিতি
বিভিন্ন প্রকার ফাইবারের সাথে পরিচিতি


(২)জুট: জুট!! কৃষিপ্রধান বাংলাতে পাটখ্যাত এ কৃষিপণ্য একসময় সোনালী আঁশ নামে বিখ্যাত হয়েছিল কিন্তু অতি চালাক বঙালির কালো প্রবৃত্তিতে তা নিমেষেই খ্যাতিশুন্য হয়ে পড়ে।জুট দিয়ে জিওটেক্সটাইল ও প্যাকেজিং এর পণ্যসামগ্রী প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া স্পোর্টেক্স, অ্যাগ্রোটেক্স প্রভৃতিতে জুটের ব্যবহার লক্ষনীয়।উৎপাদিত জুটের বড় অংশ ইন্ডিয়ার পশ্চিম বাংলা,বিহার, আসাম, উড়িসা আর উত্তর প্রদেশে হয়।সারা বাংলায় কমবেশি বিস্তৃতি থাকলেও ফরিদপুর,কুষ্টিয়া,খুলনা,রাজবাড়ি সহ পুরো দক্ষিন -পশ্চিম বাংলায় উৎপাদন বেশি।



(৩)লিনেন : ফ্লাক্স নামক উদ্ভদের বাকল থেকে লিনেন সংগ্রহ করে তার প্রক্রিয়াদি শেষে সুতা পাওয়া যায়।লিনেন ফাইবার পরিষ্কার বেশ সুন্দরও বটে।সৌন্দর্য আর আভিজাত্যের প্রতীকী পোশাক তৈরীতে লিনেন ব্যবহার করা হয়।এটিকে ভেজিটেবল ফাইবারও বলা হয়।সিগারেটের কাগজ কিন্তু লিনেন ফাইবারের।


(৪)পশম(wool) : এটি প্রোটিন ফাইবার। মেষ বা ভেড়া নামক প্রাণীর বহিরাবরণের পশম যা ইংরেজিতে উল নামে পরিচিত। উলের মাঝের ৩০%-৭০% অপদ্রব্য থাকে।বৈশিষ্ট্যগত কারণেই শীতকালীন পোশাকে এর ব্যবহার সর্বজনীন।

 
(৫)রেশম বা পলু পোকা অর্থাৎ ক্যাটারপিলার তার মুখ থেকে নিঃসৃত রেজিন সমৃদ্ধ লালায় ডিম্বাকৃতির যে গুটি (একে কোকন বলে)তৈরী করে তা থেকেই সিল্ক ফাইবার সংগ্রহ করা হয়।রেশমি কাপড়ের গুণমান ব্যবহারিক তাৎপর্য আলাদাভাবে ব্যাখার প্রয়োজন হয়না।লোকে মুখেই এর উন্নত গুণাবলির বার্তা শোনা যায়।হোমটেক, মেডিটেক ও ক্লোথটেক এ রেশমের বহুল ব্যবহার আছে।

(৬)নাইলন: এটি একটি কৃত্রিম ফাইবার। পলি অ্যামাইডের রাসায়নিক ক্রিয়ায় এর উৎপাদন সম্পন্ন করা হয়।দুইটি অ্যারোমেটিক সংযোগে ৮৫%অ্যামাইড লিংকেজ দ্বারা নাইলন গঠিত হয়।

(৭)ভিসকোস রেয়ন: ভিসকোস রেয়ন ফাইবার উৎপাদন প্রক্রিয়া একটু জটিল।প্রথমে প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করা হয়,এর প্রয়োজন ও পরিমাণ মত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরী হয় ভিসকোস রেয়ন।স্পষ্টত, এটি একটি রিজেনারেটেড ফাইবার।এজন্য একে কৃত্রিম সিল্কও বলা হয়।সাধারণত পর্দার কাপড়, ফিনিশিং কাপড়, ভেলভেট,কুশন কভার,সোফা কভার ও সার্জিক্যাল কাপড়ে ভিসকোস রেয়ন ব্যবহৃত হয়।

(৮)অ্যালজিনেট: এটি একটি সামুদ্রিক ফাইবার।এক প্রকার সামুদ্রিক আগাছা থেকে অ্যালজিনেট সংগ্রহ করা হয়।ক্যালসিয়াম অ্যালজিনেট দ্বারা অ্যালজিনেট ফাইবার তৈরি করা হয়।ফিনিশিং পোশাক আর হাসপাতালের সার্জক্যাল ড্রেসিং এ অ্যালজিনেট ফাইবার ব্যবহার করা হয়।

(৯)গ্লাস:দামী আর অত্যাধুনিক ফাইবার হিসেবে গ্লাস ফাইবারের কদর ভালো।আগুন প্রতিরোধক পোশাকে এ ফাইবারের ব্যবহার বেশি।এটি একটি প্রাকৃতিক খনিজীয় ফাইবার।সিলিকা স্যান্ড,সোডা অ্যাশ, লাইমস্টোন বোরাক্স,বরিক এসিড ফেল্ডস্পের ও ফ্লাওয়ার স্পার এর রাসায়নিক উপাদান।

(১০)স্পানডেক্স: নাইট্রোজেন,হাইড্রোজেন,কার্বন ও অক্সিজেন স্পানডেক্সের মূল উপাদান।সেগমেন্টেড পলিইউরেথিন এর ৮৫% উপাদানে এ কৃত্রিম ফাইবার তৈরী করা হয়।লেস,সুইমিং জ্যাকেট প্রভৃতিতে স্পানডেক্স ব্যবহৃত হয়।

(১১)এক্রাইলিক: পাইন ফেব্রিক,কার্পেট ও গালিচা ফিনিশিং কাপড়ে বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত” র ম্যাটেরিয়াল” হল এক্রাইলিক।এর মূল উপাদান কার্বন,হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেন।উলের মত গুণাগুন সমৃদ্ধ কৃত্রিম ফাইবার হিসেবে এর যথেষ্ট ব্যবহার আছে।
এছাড়া আরও কিছু ফাইবার বিবিধ টেক্সটাইল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।এর মধ্যে মেটালিক ফাইবার,রাবার ফাইবার ও প্রোটিন ফাইবার উল্লেখ্য।কিছু নন সেলুলোজিক ফাইবার ও বিশেষ উদ্দশ্যে কমবেশি ব্যবহার করা হয়।

ক্রেডিটঃ টেক্সটাইল বাংলা ২৪
Previous Post Next Post

Contact Form