বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন বিভাগ সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধশালী বস্ত্র শিল্প রয়েছে যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিল্পটি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০% এর বেশি, এটি দেশের জিডিপিতে সবচেয়ে বড় অবদানকারী। টেক্সটাইল শিল্প ৪ মিলিয়নেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান প্রদান করে, যার বেশিরভাগই নারী, যারা কর্মশক্তির প্রায় ৬০%।বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প প্রাথমিকভাবে শার্ট, প্যান্ট এবং ড্রেসের মতো তৈরি পোশাক উৎপাদনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। দেশটির প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হল এর কম শ্রম খরচ, যা সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাকের সন্ধানে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আকর্ষণ করে।
বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন বিভাগ সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা |
এর সাফল্য সত্ত্বেও, বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্প দুর্বল কাজের পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ সহ বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ২০১৩ সালে, রানা প্লাজা কারখানার পতনে ১১০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল এবং শিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। তারপর থেকে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগগুলি মোকাবেলা করতে এবং কাজের অবস্থার উন্নতির জন্য উল্লেখযোগ্য উন্নতি করা হয়েছে, কিন্তু শ্রমিকদের সুরক্ষিত এবং ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করার জন্য আরও কাজ করা দরকার।
গার্মেন্টস ডাইং, ওয়াশিং এবং ফিনিশিং সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তরসাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পও কোভিড-১৯ মহামারী সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। মহামারীটি সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করেছে এবং পোশাকের চাহিদা হ্রাসের দিকে পরিচালিত করেছে, যা শিল্পে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।
এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে এবং লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান প্রদান করছে। শিল্পটি কাজের অবস্থা এবং নিরাপত্তার মান উন্নয়নে অগ্রগতি করছে এবং COVID-19 মহামারী দ্বারা আনা চ্যালেঞ্জগুলির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন বিভাগ সম্বন্ধে আলোচনা
বাংলাদেশ টেক্সটাইল শিল্প একটি জটিল এবং বৈচিত্র্যময় খাত যা বিভিন্ন বিভাগ নিয়ে গঠিত, প্রতিটির নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং চ্যালেঞ্জ রয়েছে। স্পিনিং এবং ওয়েভিং থেকে শুরু করে ডাইং এবং গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগই শিল্পের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বৈশ্বিক টেক্সটাইল বাজারে একটি প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানে অবদান রাখে।
স্পিনিং-
প্রাকৃতিক অথবা কৃত্তিম উৎস থেকে প্রাপ্ত ফাইবারকে সুতায় পরিনত করার পদ্ধতিকে স্পিনিং বলা হয়। স্পিনিং এর বেশ কিছু ধাপ রয়েছে যেমন ব্লো-রুম,কার্ডিং,ড্রইং,কম্বিং,সিমপ্লেক্স এবং রিং ফ্রেম।“ব্লো-রুম” স্পিনিং এর প্রথম ধাপ যেখানে ওপেনিং,ক্লিনিং,ব্লেন্ডিং ও মিক্সিং করে ফাইবারের বেলকে আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে বিশিষ্ট ল্যাপে পরিনত করা হয়।
এর পরের ধাপ “কার্ডিং” যা স্পিনিং এর হৃদপিন্ড হিসেবে বিবেচ্য । কার্ডিং এর মাধ্যমে ব্লো- রুমে তৈরি হওয়া ল্যাপ থেকে স্লাইভার তৈরি করা হয় ।
স্পিনিং কোয়ালিটি কি ? স্পিনিং এর কিছু ভাইবা প্রশ্ন এবং উত্তরকার্ডিং এর পরে আসে “ড্র ফ্রেম”,এখানে স্লাইভারকে ডাব্লিং করে ড্রাফট দেয়া হয় । এর পরে প্রয়োজন বোধে স্লাইভারের ভিতরের ফাইবার গুলো যাতে আরও শক্ত হয় তার জন্য কম্বিং করা হয়ে থাকে ।
এছাড়া কম্বিং ছোট ফাইবার কে দূর করে , ফাইবার গুলোর মধ্যে সমান্তরাল ভাল বাড়ায়।
স্পিনিং |
কম্বিং এর পর স্লাইভার গুলোকে নিয়ে আসা হয় সিম্প্লেক্স ম্যাশিনে যেখানে স্লাইভার গুলোর ঘনত্ব কমিয়ে সুতা তৈরির জন্য আবারও কিছু টুইস্ট প্রদান করা হয় , সিমপ্লেক্স ম্যাশিনে স্লাইভার যে ফর্মে রূপান্তরিত হয় তাকে রোভিং সুতা বলে।
সর্বশেষের ধাপটি “রিং ফ্রেম” । ববিনের মধ্যে থাকা রোভিং সুতাকে রিং ফ্রেমে বসিয়ে উচ্চ গতিসম্পন্ন রোলারের মধ্যে দিয়ে গমন করিয়ে ফেব্রিক তৈরিতে ব্যাবহার উপযোগী সূতায় পরিনত করার মাধ্যমে স্পিনিং এর কাজ সমাপ্ত হয়।
ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং –
বর্তমানে ফেব্রিক তৈরির অনেক নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কৃত হলেও উইভিং ও নিটিং কেই সবচেয়ে পরিচিত ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়া ধরা হয়। তন্মদ্ধে উইভিং মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন ও বেশি ব্যাবহৃত কৌশল।
নিটেড ফেব্রিক তৈরীর ক্ষেত্রে বায়ারের Requirementsআদিম মানুষ সম্ভবত ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে তৈরি পাখির বাসা দেখেই প্রথম কাপড় তৈরি করার অনুপ্রেরণা পেয়েছিল। স্পিনিং পদ্ধতির উন্নতির সাথে সাথে, মানুষ তাঁতে ব্যাবহার করার জন্য আরও উন্নততর কাঁচামাল পেতে থাকল।
ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং |
প্রথমে হাতে চালিত তাঁত যন্ত্র দিয়েই মানুষ কাপড় বুনত । এখন অনেক রকমের আধুনিক স্বয়ংক্রিয় তাঁত যন্ত্রের আবির্ভাব হয়েছে যেগুলো খুব অল্প শক্তিতে চলে এবং বাহারি ডিজাইনের সৃষ্টি করতে পারে।তবে বর্তমান সময়ে কাপড় তৈরির সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার হওয়া কৌশলের নাম নিটিং।
নিটিং এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য কৌশলগত বিভিন্নতা এবং প্রায় সবধরনের কৃত্তিম ও প্রাকৃতিক ফাইবারকে ব্যাবহার করার উপযোগ্যতা । হোশিয়ারি গেঞ্জি , সোয়েটার, অন্তর্বাস , কোট অনেক রকমের কাপড় নিটিং পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে।
নিটিং এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য কৌশলগত বিভিন্নতা এবং প্রায় সবধরনের কৃত্তিম ও প্রাকৃতিক ফাইবারকে ব্যাবহার করার উপযোগ্যতা । হোশিয়ারি গেঞ্জি , সোয়েটার, অন্তর্বাস , কোট অনেক রকমের কাপড় নিটিং পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে।
ওয়েট প্রোসেসিং-
ওয়েট প্রোসেসিং |
- কাপড়ে মাড় জাতীয় পদার্থ থাকলে তাকে দূর করতে ডি-সাইজিং করা হয়।
- কাপড়ের মধ্যে ফ্যাট,তেল,চর্বি ও ছাই জাতীয় অপদ্রব্য কে দূর করার নাম স্কাউয়ারিং ।
- ফাইবারের গায়ে যে কিছু প্রাকৃতিক রঙ থাকে সেগুলোকে দূর করতে ব্লিচিং করা হয়ে থাকে।
- ফেব্রিকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করনের লক্ষ্যে মার্চেরাইজিং করা হয়
গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং-
বড় আকারের টেক্সটাইলজাঁত সামগ্রী উৎপাদন করতে যেসব প্রস্তুতকারক পদ্ধতি ও কৌশলের ব্যাবহার করা হয় তারই সম্মিলিত রুপকে গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং বলা হয়। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়
১) ওভেন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি
২)নিট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি
৩) সোয়েটার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি
পোশাক তৈরি হয় প্রধানত সেলাই ম্যাশিনের সাহায্যে। সাধারণত যেসব প্রকৃতির সেলাই ম্যাশিন ব্যাবহার হয় তাদের তালিকা নিচে দেয়া হল
১)লক-স্টিচ
২)চেইন-স্টিচ
৩)ওভার লক
৪)ফ্ল্যাট লক
৫)ব্লাইন্ড স্টিচ
৬)বার-টাক
৭)বটম- হোল
৮)বটম-এটাছিং
৯)লেবেল সেলাই ম্যাশিন
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে কয়টি বিভাগ থাকে? গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং এর ফ্লোচার্ট?
টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির প্রধান কাজ যদিও পোশাক তৈরি কিন্তু এর বাইরেও বহু সংখ্যক মানুষ নিয়োজিত থাকেন নতুন ফ্যাশন ও ডিজাইন তৈরি করার কাজে। কিছু টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে যেগুলোর উৎপাদিত পন্যের তালিকায় রয়েছে শুধু কম্বল,বালিশের কভার, চাদর,তোয়ালে ইত্যাদি। ফেব্রিক আমদানি ও রপ্তানির ব্যাবস্থাপনাও টেক্সটাইল শিল্প কলকারখানার একটি অংশ।
পরিশেষে এটা বলা বাঞ্ছনীয় যে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি আমাদের উপরিল্লিখিত সামগ্রির যোগানের সাথে সাথে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবিকা নির্বাহ করার একটি বিশাল ক্ষেত্র ।
পরিশেষে এটা বলা বাঞ্ছনীয় যে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি আমাদের উপরিল্লিখিত সামগ্রির যোগানের সাথে সাথে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবিকা নির্বাহ করার একটি বিশাল ক্ষেত্র ।
Related Tag:
গার্মেন্টস এর বিভিন্ন পদ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস Bangladesh garments industry Textile industry in Bangladesh Top 10 textile industry in Bangladesh ready-made garments industry in Bangladesh Top 20 textile industry in Bangladesh Bangladesh garments industry list Garment industry in Bangladesh paragraph textile industry pdf
আরও পড়ুনঃ